সবাক বাংলা ডেস্ক: কাতার বিশ্বকাপে বেশ কিছু নতুন নিয়ম এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয় হলো ফিফার নতুন অফসাইড (Offside) প্রযুক্তি। ২০২২ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে কাতারের বিপক্ষে প্রথম গোলটি বাতিল করার পর অনেকেই বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এরপর আর্জেন্টিনা বনাম সৌদি আরব ও স্পেন বনাম জার্মানি সহ বেশ কয়েকটি চরম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের গোল খালি চোখে দেখতে ঠিকঠাক মনে হলেও প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। এর কারণ হলো 'Semi-Automate Offside Technology' নামের একটি বিশেষ ব্যবস্থা ফুটবল ম্যাচে কাজে লাগানো হয়েছে।
১৮৭২ সালে ফুটবল খেলায় অফসাইডের নিয়মটি চালু করা হয়েছিল। এরপর ফুটবলের ইতিহাসে বহুবার অফসাইডের নিয়মের পরিবর্তন আনা হয়েছে। একজন খেলোয়াড়কে তখনই অফসাইড হিসেবে ধরা হয়, যখন তার সামনে প্রতিপক্ষ দলের গোলরক্ষক বাদে অন্য কোন খেলোয়াড় থাকে না। তবে গোলরক্ষক বাদে কমপক্ষে একজন খেলোয়াড় যদি আক্রমণকারী দলের খেলোয়াড়ের সামনে থাকে সেক্ষেত্রে অফসাইড হয় না। অতীতে সহকারী রেফারীদের সহায়তায় খালি চোখে দেখেই অফসাইটে সিদ্ধান্ত দেওয়া হতো। কিন্তু সেক্ষেত্রে অনেক সময়ই ভুল ত্রুটি হয়েই যেতো। সেইসব ভুলত্রুটি ঠিক করতেই ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে VAR প্রযুক্তি চালু করা হয়। এর পুরো কথা হল 'Video Assistant Referees'।
আরও পড়ুন: এসএসকেএম হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার ভয়ানক অভিজ্ঞতা বললেন মুখমন্ত্রী
খেলা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ বিচার বিশ্লেষণ করে মাঠে রেফারীকে সহায়তা করার ব্যবস্থাকেই বলা হয় VAR। এই প্রযুক্তি আসার পরেও বিতর্ক যেন পুরোপুরি থামছিল না। তাই ফুটবলের অফসাইডকে নিখুঁত করতে গত ৩ বছরের চেষ্টায় ফিফা ১৮ নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। একে বলা হয় 'Semi-Automate Offside Technology'। এর সাহায্যে কঠিনতম অফসাইড সমস্যা অনেক বেশি নিখুঁত ও দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা যায়। প্রতিটি বিশ্বকাপের অফিসিয়াল ফুটবলের একটি নাম রাখা হয়। এবারের কাতার বিশ্বকাপের বলের নাম 'আল রিহালা' যার অর্থ ভ্রমণ। এবারের এই বলটি খানিকটা ভিন্ন। একে বলা হচ্ছে 'Connected ball'। কারণ এই বলে ঠিক মাঝখানে একটি বিশেষ সেন্সর বসানো রয়েছে। এই সেন্সর অফসাইড নিয়মে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে কাজ করে।
শুধু বলই নয় প্রতিটি ফুটবলারের শরীরের ২৯ ধরনের নড়াচড়া পর্যবেক্ষণের জন্য আরো একটি প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়েছে। একে বলা হয় 'Limb-Tracking Technology'। ফুটবল স্টেডিয়ামের উপরের দিকে বসানো থাকে ১২ টি বিশেষ ধরনের ক্যামেরা। এই ১২ টি ক্যামেরার সাহায্যে ফুটবল ও খেলোয়াড়দের গতিবিধি সর্বক্ষণই পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। খেলোয়াড়দের শরীরের নড়াচড়া প্রতি সেকেন্ডে ৫০ বার এবং বলের সেন্সর প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ বার নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। শুধু তাই নয় একজন খেলোয়াড় ঠিক কোন মুহূর্তে বলের কোন অংশে কিক করল সেই তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। সেই কারণেই কোনো একজন খেলোয়াড় যদি অফসাইড পজিশন থেকে বলটি রিসিভ করে তাহলে বল থেকে VAR এ একটি অ্যালার্ট চলে যায়।
আরও পড়ুন: লা রিনকোনাডা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত এক "স্বর্ণ শহর"
তখন VR থেকে বল এবং অফসাইড থেকে খেলোয়াড়ের অবস্থান বিশ্লেষণ করা হয়। এই প্রযুক্তি নিজে নিজেই সব সময় অফসাইড লাইন তৈরি করে বিচার-বিশ্লেষণ করতে থাকে। সেই জন্য খুবই অল্প ও দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। যদিও শেষ পর্যন্ত যাচাই করে একজন মানুষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর সেই কারণেই একে Semi- Automate Offside প্রযুক্তি বলা হয়ে থাকে। নতুন প্রযুক্তির কারণে অফসাইড বিতর্কের অবসান ঘটলেও অনেকেই বলছেন, ফুটবলের মত এইরকম একটি খেলায় আধুনিক প্রযুক্তি খেলার স্বাভাবিক গতিকে বাঁধা দিয়ে থাকে।
Post a Comment